অনাগ্রহী ভোটারদের ভোট কুড়াতে মরিয়া কমালা ও ট্রাম্প
বলা হচ্ছে গত কয়েক দশকের মধ্যে এবারই সবচেয়ে প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন হতে চলেছে যুক্তরাষ্ট্রে। ভোটের আর এক সপ্তাহও বাকি নেই। চলছে শেষ সময়ের প্রচারণা। ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমালা হ্যারিস ও সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় কেউ কাউকে এক তিল ছাড় দিয়ে কথা বলছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আমেরিকানদের কাছে এবার নির্বাচনী আমেজটাও একটু অন্যরকম। রয়েছে নারী-পুরুষ সমীকরণও।
এর আগে ট্রাম্প ২০১৬ সালে যখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন তখন তার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি একজন নারী। মাঝে ২০২০ সালের নির্বাচনে জো বাইডেনের কাছে হেরে যান ট্রাম্প। এবার ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ নারী হলেও তিনি যে একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নারী হিসেবে কমালাই দ্বিতীয় প্রার্থী যিনি এ বছর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হয়েছেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি কি ট্রাম্পকে হারিয়ে আমেরিকার প্রথম নারী প্রেসিডেন্টের মুকুট নিজের মাথায় চড়াতে পারবেন। এক্ষেত্রে গুরুর্ত্বপূণ নিয়ামক হতে পারে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। তাইতো শেষ সময়ে এসে ওই রাজ্যগুলোর অনাগ্রহী ভোটারদের ভোট কুড়াতে মরিয়া কমালা ও ট্রাম্প।
ভয়েস অব আমেরিকার এক খবরে বলা হয়েছে, ডেমোক্রেটিক দলীয় প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমালা হ্যারিস হোয়াইট হাউসের কাছে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভোটারদের সামনে তার কথিত ‘সমাপ্তি যুক্তি’ তুলে ধরছেন। আর রিপাবলিকান প্রার্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প পেনসিলভেনিয়ায় প্রচার অভিযান চালাচ্ছেন। পেনসিলভেনিয়া হচ্ছে সাতটি অঙ্গরাজ্যের একটি যেগুলো তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এবং সামগ্রিক ভাবে নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।
উভয় প্রার্থীই আগামী চার বছরের এই নতুন মেয়াদে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার অনুপযুক্ত বলে পরস্পরকে অবমূল্যায়ন করছেন। কয়েক দশকের মধ্যে এই যে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হতে চলেছে তাতে যেসকল ভোটাররা এখনও ঠিক করেনি কাকে ভোট দেবেন, তাদের কাছে ভোটের সুবিধা চাইছেন উভয় প্রতিপক্ষ।
জরিপে দেখা যাচ্ছে, কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্যে হ্যারিস ও ট্রাম্প উভয়ই সমান সমান অবস্থানে রয়েছেন কিংবা খুব সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে আছেন অথবা পিছিয়ে আছেন। তবে এর সবটুকুই সংখ্যাতাত্ত্বিক হিসাব। এতে ভুল হতেও পারে। এই সাতটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের প্রত্যেকটিতেই কয়েক হাজার ভোট গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
হ্যারিস ও ট্রাম্পের শেষ মুহূর্তের ভাষণ সেই সব ভোটারদের ভোটদানে আগ্রহী করে তুলতে পারে যারা এখনও সিদ্ধান্ত নেননি। তবে এই নির্বাচনী প্রচার অভিযানে তারা তাদের প্রতিশ্রুতিশীল ভোটদাতাদের শিগগিরই ভোটদান করতে কিংবা নির্বাচনের দিনে ভোট দিতে বলছেন যা কিনা ফলাফল নির্ধারণ করতে পারে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকশান ল্যাব জানিয়েছে যে, আগামী মঙ্গলবারের আগেই প্রায় ৪ কোটি ৯০ লাখ লোক ভোট কেন্দ্রে গিয়ে কিংবা ডাক মারফত আগাম ভোট দিয়েছেন। ২০২০ সালের নির্বাচনে সাড়ে ১৫ কোটি লোক ভোট দেন।
পেনসিলভেনিয়ার অ্যালেনটাউনের দিকে যাবার আগে ট্রাম্প সমুদ্রপারে ফ্লোরিডায় মার-এ-লাগোতে বক্তব্য রাখেন। তিনি হ্যারিসকে, ‘মারাত্মক ভাবে অযোগ্য, সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক’ বলে বর্ণনা করেন।
তবে ট্রাম্প সংবাদদাতাদের কাছ থেকে কোনো প্রশ্ন নেননি এবং গত রোববার নিউ ইয়র্কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেনে টনি হিঞ্চক্লিফের কৌতুকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেননি যেখানে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের হিস্প্যানিক অঞ্চল পিউর্টো রিকো হচ্ছে ,‘আবর্জনার ভাসমান দ্বীপ’। ট্রাম্পের নির্বাচনী অভিযান এই কৌতুক থেকে দূরে থাকছে। ট্রাম্প প্রকাশ্যে এই বিষয়ে কোন মন্তব্য করেননি তবে এবিসি নিউজকে বলেছেন, তিনি হিঞ্চক্লিফকে চেনেন না। তিনি বলেন, ‘কেউ তাকে সেখানে নিয়ে এসেছিলেন, আমি জানি না সে কে’।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল সরাসরি জাতীয় ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয় না বরং ইলেক্টরাল কলেজ তা নির্ধারণ করে। ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের হিসেবে এই প্রতিযোগিতা হয়, ৫০ টি অঙ্গ রাজ্যের মধ্যে ৪৮টি তাদের রাজ্যে বিজয়ীকে, হ্যারিস কিংবা ট্রাম্প, যিনিই হোন সব ইলেক্টরাল ভোট প্রদান করে। নেব্রাস্কা ও মেইন রাজ্য দুটি তাদের রাজ্যের ও কংগ্রেসানাল ডিস্ট্রিক্টের ভোট প্রদান করে। প্রত্যেক রাজ্যের ইলেক্টরাল ভোট তাদের মোট জনসংখ্যার উপর নির্ভর করে নির্ধারিত হয়। প্রেসিডেন্ট পদে জয় লাভ করতে হলে মোট ৫৩৮ টি ইলেক্টরাল ভোটের মধ্যে ২৭০টি ইলেক্টরাল ভোটের প্রয়োজন পড়ে।