ঢাকা ১২:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এক মাস ধরে পানিতে ভাসছে আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়ন, মানবেতর জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদন:

 

পানি উঠে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে বসতঘর। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেচারদিকে পানি আর পানি। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর, মাছের ঘের, ফসলের খেত—সবই পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এক মাস ধরে এমন অবস্থার মধ্যে দিন পার করছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক দফায় প্রবল বৃষ্টির পানিনিষ্কাশিত না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলোতেও তিন–চার ফুট পানি উঠেছে। বসবাসের উপযোগী না থাকায় বাড়ি ছেড়েছে অনেক পরিবার। খাবারের অভাবে গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কাদাকাটি ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, যত দূর চোখ যায়, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে কোনো রকম ভেলা বা নৌকায় করে চলাচল করছেন। অনেকে নিচু এলাকা থেকে উঁচু জায়গায় এসে বসবাস করছেন। কেউ কেউ আবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। ৫০-৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে কাদাকাটি দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে ও কাদাকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

পানিবন্দী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দফা ২-৩ সেপ্টেম্বর, দ্বিতীয় দফায় ১৩-১৬ ও তৃতীয় দফায় ২৪-২৬ সেপ্টেম্বর টানা বৃষ্টিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাদাকাটি, পূর্ব কাদাকাটি, যদুয়ারডাঙ্গা, টেংরাখালী, ঝিকরা, তালবাড়িয়া, বলাবাড়িয়া, করচাখালী, খেজুরডাঙ্গী, শ্রীরামকাটি, রাধাবল্লভপুর, মিত্র তেঁতুলিয়া, শ্রীরামকাটি, মোকামখালীসহ ইউনিয়নের ২৪ গ্রামের মধ্যে ১৫টি তলিয়ে রয়েছে। অন্য গ্রামগুলোয় কমবেশি পানি রয়েছে।

ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। মাটির ঘরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাঁর দুটি ছাগল মারা গেছে। তাঁদের এলাকার আলতাফ হোসেন, লাইলাতুল সরদার, তালেব সরদার, মনিরুল ইসলাম, জামশেদ সরদারসহ ২০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

একই এলাকার সুখজান বিবি কোমরপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাপু খুব কষ্টে নয়েছি। বাড়িঘর সব বুড়ে গেছে। চারটে ছাগল মরেগে। আরও চারটে ছাগল মরার মতো হয়ে। খাবার পানি নাই কোথাও। পানি সরার লক্ষণ দেখতে পারছিনে। এভাবে চললি বাঁচতে পারবোনে না।’

কাদাকাটি গ্রামের কামালউদ্দিন মালি কাদাকাটি দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন। তিনি জানান, ঘরে পানি উঠেছে। চৌকির তলায় ইট দিয়ে থাকার চেষ্টা করেও থাকতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কাজ নেই এলাকায়। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা।

চারদিকে পানি ওঠায় উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে
চারদিকে পানি ওঠায় উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

একই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন হালিমা খাতুনও। তিনি বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে তাঁদের জীবন চলত। ঘরে পানি ওঠায় তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এভাবে আরও এক সপ্তাহ থাকলে তাঁদের দুর্গতির সীমা থাকবে না। সরকারিভাবে গত রোববার কিছু শুকনা খাবার পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

পূর্ব কাদাকাটি গ্রামের রমজান আলী বলেন, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পানি তাঁদের এই ইউনিয়নে ওপর দিয়ে বেতনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু স্থানীয় খালগুলো ভরাট হওয়ার পাশাপাশি নেট-পাটা দেওয়ায় ও বেতনা নদীর খননকাজ শেষ না হওয়ায় পানিনিষ্কাশিত হচ্ছে না। ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ অবস্থার মধ্যে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন। খাওয়ার পানির সংকটে পড়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া কাজ না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার বলেন, কামারখালী খাল, মোকামখালী খাল ও জানাইখালী খাল ভরাট হওয়ার পাশাপাশি নেট-পাটা দেওয়ার কারণে পানিনিষ্কাশন হতে পারছে না। এ ছাড়া মোকামখালী স্লুইসগেটটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পানি সরতে পারছে না। আবার জামাইখালী স্লুইসগেটটির মুখে খাল খননের সময় মাটি ফেলে বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। ফলে পানি স্বাভাবিক নিয়মে নিষ্কাশন হতে না পেরে দীর্ঘ এলাকা জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ২৪টি গ্রামের সব কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ১৫-১৬ গ্রামে হাজার দশেক মানুষের দুর্ভোগ বেশি।

জনস্বাস্থ্য অধিপ্তরের আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খাওয়ার পানির সংকট মেটাতে তাঁরা কয়েক দিন ধরে দৈনিক তিন হাজার লিটার পানি সরবরাহ করছেন। আজ শুক্রবার থেকে তাঁরা পাঁচ হাজার লিটার করে খাওয়ার পানি সরবরাহ করছেন।

পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে ভেলা, নৌকায় করে চলাচল করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে
পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে ভেলা, নৌকায় করে চলাচল করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

কাদাকাটি ইউনিয়নে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সব কয়টিতে কমবেশি পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন আশাশুনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে চারটি বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, মোকামখালী এলাকায় ২৫ মিটারের মধ্যে দুটি স্লুইসগেট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে একটি মেরামত করে খুলে দেওয়ায় পানিনিষ্কাশিত হচ্ছে। অন্যটি বৃষ্টির আগে ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় তা আর মেরামত করা যাচ্ছে না।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, সাতক্ষীরা সদর ও তালার পানি এই এলাকা দিয়ে নামছে। যেসব স্লুইসগেট আছে, সব খুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও পানি কমছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে, যেকোনোভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে চার-পাঁচ দিন ধরে শুকনা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

ট্যাগস :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

এক মাস ধরে পানিতে ভাসছে আশাশুনির কাদাকাটি ইউনিয়ন, মানবেতর জীবন

আপডেট সময় ০৬:৪৬:৩০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

 

পানি উঠে বসবাসের অনুপোযোগী হয়ে গেছে বসতঘর। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেচারদিকে পানি আর পানি। বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পুকুর, মাছের ঘের, ফসলের খেত—সবই পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এক মাস ধরে এমন অবস্থার মধ্যে দিন পার করছেন সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবারের ১০ হাজারের বেশি মানুষ।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, কয়েক দফায় প্রবল বৃষ্টির পানিনিষ্কাশিত না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলোতেও তিন–চার ফুট পানি উঠেছে। বসবাসের উপযোগী না থাকায় বাড়ি ছেড়েছে অনেক পরিবার। খাবারের অভাবে গবাদিপশু মারা যাচ্ছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়া চারটি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রাখা হয়েছে।

সাতক্ষীরা শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কাদাকাটি ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবার সকাল নয়টা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, যত দূর চোখ যায়, চারদিকে শুধু পানি আর পানি। পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে কোনো রকম ভেলা বা নৌকায় করে চলাচল করছেন। অনেকে নিচু এলাকা থেকে উঁচু জায়গায় এসে বসবাস করছেন। কেউ কেউ আবার আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে গেছেন। ৫০-৬০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে কাদাকাটি দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে ও কাদাকাটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

পানিবন্দী লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রথম দফা ২-৩ সেপ্টেম্বর, দ্বিতীয় দফায় ১৩-১৬ ও তৃতীয় দফায় ২৪-২৬ সেপ্টেম্বর টানা বৃষ্টিতে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। কাদাকাটি, পূর্ব কাদাকাটি, যদুয়ারডাঙ্গা, টেংরাখালী, ঝিকরা, তালবাড়িয়া, বলাবাড়িয়া, করচাখালী, খেজুরডাঙ্গী, শ্রীরামকাটি, রাধাবল্লভপুর, মিত্র তেঁতুলিয়া, শ্রীরামকাটি, মোকামখালীসহ ইউনিয়নের ২৪ গ্রামের মধ্যে ১৫টি তলিয়ে রয়েছে। অন্য গ্রামগুলোয় কমবেশি পানি রয়েছে।

ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের মধ্যে হাঁটুপানি। মাটির ঘরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। বাধ্য হয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন। গিয়াস উদ্দিন বলেন, তাঁর দুটি ছাগল মারা গেছে। তাঁদের এলাকার আলতাফ হোসেন, লাইলাতুল সরদার, তালেব সরদার, মনিরুল ইসলাম, জামশেদ সরদারসহ ২০টি পরিবার অন্যত্র চলে গেছে।

একই এলাকার সুখজান বিবি কোমরপানির মধ্যে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘বাপু খুব কষ্টে নয়েছি। বাড়িঘর সব বুড়ে গেছে। চারটে ছাগল মরেগে। আরও চারটে ছাগল মরার মতো হয়ে। খাবার পানি নাই কোথাও। পানি সরার লক্ষণ দেখতে পারছিনে। এভাবে চললি বাঁচতে পারবোনে না।’

কাদাকাটি গ্রামের কামালউদ্দিন মালি কাদাকাটি দুর্যোগ আশ্রয়কেন্দ্রে এসে উঠেছেন। তিনি জানান, ঘরে পানি উঠেছে। চৌকির তলায় ইট দিয়ে থাকার চেষ্টা করেও থাকতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। কাজ নেই এলাকায়। কোনো রকমে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছেন তাঁরা।

চারদিকে পানি ওঠায় উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে
চারদিকে পানি ওঠায় উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন মানুষ। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

একই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছেন হালিমা খাতুনও। তিনি বলেন, দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনো রকমে তাঁদের জীবন চলত। ঘরে পানি ওঠায় তাঁরা আশ্রয়কেন্দ্রে এসেছেন। এভাবে আরও এক সপ্তাহ থাকলে তাঁদের দুর্গতির সীমা থাকবে না। সরকারিভাবে গত রোববার কিছু শুকনা খাবার পেয়েছেন বলে জানান তিনি।

পূর্ব কাদাকাটি গ্রামের রমজান আলী বলেন, সাতক্ষীরা সদর ও তালা উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পানি তাঁদের এই ইউনিয়নে ওপর দিয়ে বেতনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু স্থানীয় খালগুলো ভরাট হওয়ার পাশাপাশি নেট-পাটা দেওয়ায় ও বেতনা নদীর খননকাজ শেষ না হওয়ায় পানিনিষ্কাশিত হচ্ছে না। ২ সেপ্টেম্বর থেকে এ অবস্থার মধ্যে তাঁরা দিন কাটাচ্ছেন। খাওয়ার পানির সংকটে পড়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া কাজ না থাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন।

কাদাকাটি ইউপি চেয়ারম্যান দীপঙ্কর কুমার সরকার বলেন, কামারখালী খাল, মোকামখালী খাল ও জানাইখালী খাল ভরাট হওয়ার পাশাপাশি নেট-পাটা দেওয়ার কারণে পানিনিষ্কাশন হতে পারছে না। এ ছাড়া মোকামখালী স্লুইসগেটটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় পানি সরতে পারছে না। আবার জামাইখালী স্লুইসগেটটির মুখে খাল খননের সময় মাটি ফেলে বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। ফলে পানি স্বাভাবিক নিয়মে নিষ্কাশন হতে না পেরে দীর্ঘ এলাকা জলাবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান আরও জানান, ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডের ২৪টি গ্রামের সব কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে ১৫-১৬ গ্রামে হাজার দশেক মানুষের দুর্ভোগ বেশি।

জনস্বাস্থ্য অধিপ্তরের আশাশুনি উপজেলা প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, খাওয়ার পানির সংকট মেটাতে তাঁরা কয়েক দিন ধরে দৈনিক তিন হাজার লিটার পানি সরবরাহ করছেন। আজ শুক্রবার থেকে তাঁরা পাঁচ হাজার লিটার করে খাওয়ার পানি সরবরাহ করছেন।

পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে ভেলা, নৌকায় করে চলাচল করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে
পানিবন্দী মানুষ নিরুপায় হয়ে ভেলা, নৌকায় করে চলাচল করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা কাদাকাটি ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

কাদাকাটি ইউনিয়নে ১১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় সব কয়টিতে কমবেশি পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন আশাশুনি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি আরও জানান, এর মধ্যে চারটি বাধ্য হয়ে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বিভাগ-২) উপসহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম বলেন, মোকামখালী এলাকায় ২৫ মিটারের মধ্যে দুটি স্লুইসগেট মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ইতিমধ্যে একটি মেরামত করে খুলে দেওয়ায় পানিনিষ্কাশিত হচ্ছে। অন্যটি বৃষ্টির আগে ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু বৃষ্টি হওয়ায় তা আর মেরামত করা যাচ্ছে না।

আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় বলেন, সাতক্ষীরা সদর ও তালার পানি এই এলাকা দিয়ে নামছে। যেসব স্লুইসগেট আছে, সব খুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও পানি কমছে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে, যেকোনোভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে চার-পাঁচ দিন ধরে শুকনা খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।