ঢাকা ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা তুলে নেন এস আলমরা

নিজস্ব প্রতিবেদন:

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ইউনিয়ন ব্যাংকে থাকা টাকা তুলে নেন এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের নামে থাকা টাকা অন্যদের নামে স্থানান্তর করেন, অন্য ব্যাংকেও সরিয়ে নেন। এভাবে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয় গ্রুপটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এস আলম গ্রুপ যখন টাকা তুলে নেয়, তখন ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ২৭ আগস্ট এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে তাদের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ঋণের স্থিতি ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৬‍২ শতাংশ। ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে তারা এই ঋণ নেয়। এসব ঋণ নেওয়ার পর কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে ব্যাংকটির জনবলের ৭৬ শতাংশই কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি নিয়োগ পাওয়া, যাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামে। এস আলমের বাড়িও সেখানে। ফলে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও তাঁদের সহযোগী দ্বারাই ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী। এর আগে ব্যাংকটি থেকে নিজের সব টাকা তুলে নেন তিনি। এই ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও আত্মগোপনে আছেন।

কত টাকা সরালেন এস আলমরা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বন্দরটিলা শাখায় সাইফুল আলমের মেয়াদি আমানত হিসাব থেকে ১১ আগস্ট টাকা তুলে নিয়ে খাতুনগঞ্জ শাখায় এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির নামে জমা করা হয়। একই দিনে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যাংকের ডিটি রোড শাখায় স্থানান্তর করে রাসেল এন্টারপ্রাইজ এবং বহদ্দারহাট শাখায় ৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করে কোভ ট্রেডিংয়ে জমা করা হয়।

এস আলমের ভাই রাশেদুল আলম ৮ ও ১৪ আগস্ট কদমতলী শাখা থেকে ৮ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে একই শাখায় রাশেদুল করিম চৌধুরী ও আজিজুন্নেসার নামে জমা করা হয়। ২৮ আগস্ট এস আলমের শ্যালক আরশাদ মাহমুদ ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে পে–অর্ডারের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, এস আলম–সংশ্লিষ্ট আনসারুল আলম ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে ২০ আগস্ট দেড় কোটি টাকা তুলে নেন, পরে তা জনৈক রোকেয়া বেগম ও হাসনা হেনার নামে জমা করা হয়। এর আগে ১৮ আগস্ট জনৈক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে তা এস আলম কোল্ড রোল স্টিলমিলের হিসাবে জমা করেন।

এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট টপ টেন ট্রেডিং হাউসের নামে ইউনিয়ন ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় জমা থাকা ৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ১১ আগস্ট তুলে নেওয়া হয়। বাকি অর্থ তুলে ব্যাংকের আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জমা করা হয়। এই গ্রাহকের নামে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান শাখায় ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে, যা আদায় হচ্ছে না।

ঋণের ৬২% এস আলমের

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকটির মোট ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এস আলম গ্রুপ ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়। পরে এসব হিসাবে আর কোনো টাকা জমা হয়নি। এর মধ্যে ঢাকার পান্থপথ শাখার এক গ্রাহককে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই ১১৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়, তার বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেসব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও বন্ধ পেয়েছে।

কোনো স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যায়, অথচ ইউনিয়ন ব্যাংক ৭৯ কোটি টাকা জমার ওপর ৮৫৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী আমানতের পরিবর্তে ভুয়া আমানত দেখিয়ে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংকটির এমডিকে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, ‘ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা, যার বেশির ভাগই কাল্পনিক লেনদেন। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই।’

এদিকে ব্যাংকটি এখন তারল্যসংকটে ভুগছে। অনেক শাখায় নগদ লেনদেন বন্ধ রয়েছে। নতুন পর্ষদও তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত তদারকির মাধ্যমে ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেই পরিষ্কার হবে কে কত টাকা নিয়েছে।’

জনবলের ৭৬ শতাংশ চট্টগ্রামের

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, ব্যাংকের মোট জনবলের ৭৬ শতাংশ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের সবাই চট্টগ্রামের। প্রসঙ্গত, ব্যাংকটির উদ্যোক্তা এস আলমের আদি নিবাস চট্টগ্রামের পটিয়ায়। এর মানে ব্যাংকটির জনবলের বড় অংশ পটিয়ার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরে আগের পর্ষদ কর্তৃক নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও তাঁদের নিয়োজিত জনবল বহাল রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ছলচাতুরীর মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

ট্যাগস :

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা তুলে নেন এস আলমরা

আপডেট সময় ০৫:৫৩:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৪

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও ইউনিয়ন ব্যাংকে থাকা টাকা তুলে নেন এস আলম গ্রুপের প্রধান সাইফুল আলম ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা। পাশাপাশি তাঁরা নিজেদের নামে থাকা টাকা অন্যদের নামে স্থানান্তর করেন, অন্য ব্যাংকেও সরিয়ে নেন। এভাবে ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে প্রায় ৫০ কোটি টাকা সরিয়ে নেয় গ্রুপটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। এস আলম গ্রুপ যখন টাকা তুলে নেয়, তখন ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গত ২৭ আগস্ট এই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সময়ে তাদের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্টদের ঋণের স্থিতি ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৬‍২ শতাংশ। ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে তারা এই ঋণ নেয়। এসব ঋণ নেওয়ার পর কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। অন্যদিকে ব্যাংকটির জনবলের ৭৬ শতাংশই কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি নিয়োগ পাওয়া, যাঁদের বাড়ি চট্টগ্রামে। এস আলমের বাড়িও সেখানে। ফলে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও তাঁদের সহযোগী দ্বারাই ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে ইউনিয়ন ব্যাংক এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। গ্রুপটির চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অতি ঘনিষ্ঠ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ইউনিয়ন ব্যাংকসহ ৯টি ব্যাংককে এস আলমমুক্ত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে নানা আর্থিক অপরাধের অভিযোগ মাথায় নিয়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী। এর আগে ব্যাংকটি থেকে নিজের সব টাকা তুলে নেন তিনি। এই ব্যাংকের আরও কয়েকজন কর্মকর্তাও আত্মগোপনে আছেন।

কত টাকা সরালেন এস আলমরা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বন্দরটিলা শাখায় সাইফুল আলমের মেয়াদি আমানত হিসাব থেকে ১১ আগস্ট টাকা তুলে নিয়ে খাতুনগঞ্জ শাখায় এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির নামে জমা করা হয়। একই দিনে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যাংকের ডিটি রোড শাখায় স্থানান্তর করে রাসেল এন্টারপ্রাইজ এবং বহদ্দারহাট শাখায় ৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করে কোভ ট্রেডিংয়ে জমা করা হয়।

এস আলমের ভাই রাশেদুল আলম ৮ ও ১৪ আগস্ট কদমতলী শাখা থেকে ৮ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে একই শাখায় রাশেদুল করিম চৌধুরী ও আজিজুন্নেসার নামে জমা করা হয়। ২৮ আগস্ট এস আলমের শ্যালক আরশাদ মাহমুদ ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে পে–অর্ডারের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, এস আলম–সংশ্লিষ্ট আনসারুল আলম ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে ২০ আগস্ট দেড় কোটি টাকা তুলে নেন, পরে তা জনৈক রোকেয়া বেগম ও হাসনা হেনার নামে জমা করা হয়। এর আগে ১৮ আগস্ট জনৈক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে তা এস আলম কোল্ড রোল স্টিলমিলের হিসাবে জমা করেন।

এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট টপ টেন ট্রেডিং হাউসের নামে ইউনিয়ন ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় জমা থাকা ৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ১১ আগস্ট তুলে নেওয়া হয়। বাকি অর্থ তুলে ব্যাংকের আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জমা করা হয়। এই গ্রাহকের নামে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান শাখায় ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে, যা আদায় হচ্ছে না।

ঋণের ৬২% এস আলমের

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত জুনে ব্যাংকটির মোট ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের ৬২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এস আলম গ্রুপ ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়। পরে এসব হিসাবে আর কোনো টাকা জমা হয়নি। এর মধ্যে ঢাকার পান্থপথ শাখার এক গ্রাহককে প্রধান কার্যালয়ের অনুমতি ছাড়াই ১১৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়। তারা যেসব প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নেয়, তার বেশির ভাগেরই অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেসব মোবাইল নম্বর ব্যবহার করা হয়, সেগুলোও বন্ধ পেয়েছে।

কোনো স্থায়ী আমানতের বিপরীতে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ দেওয়া যায়, অথচ ইউনিয়ন ব্যাংক ৭৯ কোটি টাকা জমার ওপর ৮৫৩ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। এ ছাড়া স্থায়ী আমানতের পরিবর্তে ভুয়া আমানত দেখিয়ে ১ হাজার ১৭৫ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

গত ২৪ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ব্যাংকটির এমডিকে পাঠানো এক চিঠিতে জানায়, ‘ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপের ঋণ প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা, যার বেশির ভাগই কাল্পনিক লেনদেন। এসব ঋণের বিপরীতে পর্যাপ্ত জামানত নেই।’

এদিকে ব্যাংকটি এখন তারল্যসংকটে ভুগছে। অনেক শাখায় নগদ লেনদেন বন্ধ রয়েছে। নতুন পর্ষদও তেমন কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না।

ব্যাংকটির চেয়ারম্যান মু. ফরীদ উদ্দিন আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত তদারকির মাধ্যমে ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নতির চেষ্টা করে যাচ্ছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংক চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিলেই পরিষ্কার হবে কে কত টাকা নিয়েছে।’

জনবলের ৭৬ শতাংশ চট্টগ্রামের

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনমতে, ব্যাংকের মোট জনবলের ৭৬ শতাংশ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যাঁদের সবাই চট্টগ্রামের। প্রসঙ্গত, ব্যাংকটির উদ্যোক্তা এস আলমের আদি নিবাস চট্টগ্রামের পটিয়ায়। এর মানে ব্যাংকটির জনবলের বড় অংশ পটিয়ার।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২৭ আগস্ট পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও ব্যাংকের বিভিন্ন স্তরে আগের পর্ষদ কর্তৃক নিয়োজিত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও তাঁদের নিয়োজিত জনবল বহাল রয়েছে। এতে আরও বলা হয়, ছলচাতুরীর মাধ্যমে আমানতকারীদের অর্থ সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সরাসরি সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।